• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

প্রোটিনের চাহিদা পূরণে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান: প্রধানমন্ত্রীর

  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০২৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:

গবেষণা ছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব নয়। আর এ জন্য সরকার গবেষণায় গুরুত্ব দিচ্ছে। উৎপাদনে সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নাই, ডাল-ভাতেরও অভাব নাই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস। গতকাল সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন যে আমাদের দেশে মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবে। সেই ডাল-ভাত খাওয়াতেও তো ব্যর্থ হয়েছিল তারা।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফখরুদ্দিন সাহেব প্রধান উপদেষ্টা, ইয়াজউদ্দিন সাহেব রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান মইন উদ্দিন, তারা ঘোষণা দিলেন আলু খাওয়ার জন্য, আলু দিয়ে নানা রকমের খাদ্য তৈরি করা হলো, তা প্রদর্শন করা হলো বেশ উন্নত হোটেলে। মানুষ ভাত পাচ্ছে না কী হয়েছে? আলু খাবে। কেউ আমাদের ডাল ভাত খাওয়াতে চাইলো, কেউ আমাদের আলু খাওয়াতে চাইলো। মাছে ভাতে বাঙালি আমরা, মাছ ও ভাত পেলেই আমাদের যথেষ্ট। সেটাই তো আমরা চাই। এখন অন্তত বলতে পারি মাছ-ভাতের অভাব নাই। ডাল-ভাতেরও অভাব নাই।

তিনি বলেন, মানুষের চাহিদা এখন মাংস, আরও বড় বড় মাছ খাবে। এখন দেখি জিনিসের দাম নিয়ে চিন্তিত, পেঁয়াজের দাম বাড়লো কেন? আমাদের ৯০ ভাগ পেঁয়াজ ভারত থেকে আনতে হতো। ভোজ্য তেল ৯০ ভাগ আনতে হয় বিদেশ থেকে। পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের এত ঝামেলা, তাহলে আমরা কেন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারবো না? এখন প্রায় ৪০ ভাগ আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি। আমরা কারো উপর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো না। আমরা নিজেরা উৎপাদন করব।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো। কিন্তু অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা বারবার ক্ষমতায় এসেছে, তারা এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, এটাই দুর্ভাগ্য। ১৯৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করলাম, তখন রিজার্ভ মানিও তেমন ছিল না। এশিয়াতে তখন খাদ্য মন্দা। আমাদের লক্ষ্য ছিল, আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলব না। নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করব।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সবসময় বলতেন— আমরা কারো কাছে ভিক্ষা চাইব না, কারণ ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমরা মান-সম্মান নিয়েই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। সেই আদর্শে আমরা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, পার্লামেন্টে যেদিন ঘোষণা দিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তখন বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া বসা ছিলেন। আর সাইফুর রহমান উঠে দাঁড়িয়ে বলল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্যের সাহায্য পাওয়া যাবে না। তাদের চিন্তাধারা ছিল আমরা প্রতিনিয়ত অন্যজনের কাছে হাত পেতে থাকবো। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব, আর ভিক্ষা চেয়ে খাবার খাব। ২০০১ সালে আমার সরকারের মেয়াদ শেষ হলে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি, তখন ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত আমরা রেখে গিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়— ২০০৯ সালে যখন আমরা আবার ক্ষমতায় আসি তখন দেখি, ২৬ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত তো দূরের কথা বরং ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল বাংলাদেশে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, ২০০১ সালে বিএনপি এসে সেগুলোর ওপর হামলা চালায়। অনেকের পোল্ট্রি ফার্মে বোমা মেরে মুরগি উড়িয়ে দিয়েছে। খামারিদের কাছ থেকে গরু নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। পেঁপে থেকে শুরু করে সকল ফলের গাছ কেটে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে তারা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। দেশের জন্য এটা কত ক্ষতি হবে সেই চিন্তা তাদের মাথায় ছিল না।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে আমরা গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলো জাতির পিতা করে দিয়ে গেছেন। গবেষণা ছাড়া উন্নত জাত বা অধিক ফলন ফলানো সম্ভব না।

তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের সময় এসেছে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ। আমরা যে পশু জবাই করছি, সংগ্রহ করছি, সংরক্ষণ করছি সেটা কি সঠিকভাবে হচ্ছে? এগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। উন্নত মানের জবাইখানা করতে হবে। প্রয়োজনে অঞ্চল ভিত্তিক সংরক্ষণাগার স্থাপন করতে হবে। প্রাণির উচ্ছিষ্ঠাংশ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াতকরণের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে। এ কারণে এই সেক্টরের উন্নয়নে রেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে সরকার।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছে আর পরামর্শে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাণিজ আমিষের অভাব পূরণে কাজ করছেন তিনি। তিনি দক্ষ হাতে শুরু রাষ্ট্রই পরিচালনা করেন না। তিনি একজন দক্ষ খামারীও। নিজ হাতে মাছ ধরা থেকে শুরু করে পোষণা প্রাণিদের নিজ হাতে খাবারও পরিবেশন করেন। এমন কোনো সবজি নেই যা তিনি উৎপাদন করেন না। স্বাগত বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন প্রাণিজ আমিষের অভাব পূরণে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ ও দেশের উন্নয়নে এই সেক্টরের অবদান তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, সরকারি পৃষপোশকতা ছাড়া এই সেক্টরের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশ দুধ ও মাংস উৎপাদনে স্বংসর্ম্পতার কাছাকাঠি অবস্থান করছে। এখন সময় এসেছে রফতানির। এজন্য দেশে অধিক উৎপাদনশীল জাত প্রয়োজন। কৃষি বিত্তিক শিল্পে নানা প্রনোদনা দেওয়া হলেও এই খাতে তেমন প্রনোদনা নেই। তিনি এই সেক্টরের বিদ্যুৎ বিলও কৃষির খাতের মতো করার দাবি জানান।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান পোল্ট্রি খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। সমস্রাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

পুরাতন বাণিজ্যমেলার প্রাঙ্গনে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ এবং প্রদর্শনী ২০২৪ দর্শনার্থীরা জন্যআগামী কাল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের কোনো প্রবেশমূল্য লাগবে না।

সারাদেশের পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারীরা মেলায় তাদের গবাদি পশু-পাখি প্রদর্শনের জন্য যোগ দিয়েছেন। ৬৪ জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় পাঁচ দিনব্যাপী অনুরূপ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজকরা জানান, দেশের বিভিন্ন জাতের প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনের জন্য প্রদর্শনী ময়দানে প্রায় ২৫টি প্যাভিলিয়ন ও ৩০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি প্যাভিলিয়ন সরকারি কর্তৃপক্ষের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।

মেলায় ঢাকা, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর, বেনাপোল, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গাসহ অন্যান্য জেলা থেকে বিডিএফএর মোট ৫৫ হাজার সদস্যের মধ্যে ৩ হাজারের বেশি কৃষক মেলায় যোগ দেন।

আয়োজকদের মতে, প্রদর্শনীটি তৃর্ণমূল পর্যায়ের কৃষকদের জন্য মেগা কোম্পানিগুলোর সাথে একই জায়গায় তাদের পশু-পাখি উৎপাদন ও বিক্রি করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads